নূরুল হক, মণিরামপুর প্রতিনিধিঃ

মণিরামপুরে খেদাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের (এফডবিউসি) জমি দখল করে একটি রাজনৈতিক দলীয় কার্যালয়সহ অন্তত: ১৫টি দোকানপাট নির্মান ও প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্টাফদের জন্য বরাদ্দকৃত দু’টি কোয়ার্টার দখল করে গরু-ছাগল নিয়ে বসবাস করে আসছে দুই পরিবার। স্থানীয়দের অভিযোগ সত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ন নির্বিকার।

জানাযায়, মণিরামপুরের খেদাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি (এফডবিউসি) হেলাঞ্চী গ্রামের ৭নং খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন। প্রায় ৪২ শতক জমির উপর রয়েছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। এলাকার মা ও শিশুসহ বিভিন্ন রোগীদের এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা দেওয়া হয়। একজন উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো)’র পদ থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরে সে পদটিও রয়েছে খালি। ফলে কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছে শ্রাবন্তী রানী দাস নামে একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিক (এফডবিউভি)। আর এ কেন্দ্রে রয়েছেন একজন এফপিআই, পাঁচজন এফডবিউএ, একজন করে আয়া এবং পিয়ন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্যাকমো এবং এফডবিউভির জন্য রয়েছে পৃথক দুইটি আবাসিক কোয়ার্টার। নিয়ম রয়েছে স্যাকমো এবং এফডবিøউভি অফিস সময়ের পর সার্বক্ষনিক আবাসিক কোয়ার্টারে অবস্থান করে সর্বদা সেবা প্রদান করবেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় মোটরসাইকেল চালক সিরাজুল ইসলাম এবং তার ভাই শফিকুল ইসলাম কোয়ার্টার দুইটি দখল করে পরিবার পরিজন নিয়ে প্রায় পাঁচ বছর ধরে বসবাস করে আসছে। এমনকি এই দুই পরিবার সেখানে বসবাস করার পাশাপাশি গরু-ছাগল, হাস-মুরগিও পালন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে, তৎসংলগ্ন স্টাফদের জন্য বরাদ্দকৃত কোয়ার্টারসহ আশপাশের এলাকা অস্বাস্থকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। ফলে কর্মকর্তারা কোয়ার্টারে অবস্থান করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা শ্রাবন্তী রানী দাস।

অপরদিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চার পাশের জমি দখল করে একটি রাজনৈতিক আঞ্চলিক কার্যালয়, হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, মুদিসহ প্রায় ১৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমি দখল করে এ সব স্থাপনা নির্মান করা হলেও তা পুন:উদ্ধারের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

সরেজমিন গিয়ে কোয়ার্টার দখলকারী সিরাজুল ইসলাম এবং শফিকুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। তবে তাদের মা আসমা বেগম এবং সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ফাহিমা খাতুন জানান, ইতোমধ্যে জমি ক্রয় করে বাড়ী করছেন, কিছু দিনের মধ্যেই কোয়ার্টার ছেড়ে দিবেন। চায়ের দোকানদার তরিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, হোটেল ব্যবসায়ী কবির হোসেন, মুদি দোকানী মোবারক হোসেন জানান, হাসপাতালের জায়গা ফাঁকা থাকায় তারা দোকান করেছেন। কর্তৃপক্ষ স্থাপনা নির্মাণ করলে তারা দোকান সরিয়ে নিবেন। খেদাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আবদুল হক জানান, দখলকারীরা সবাই এলাকার প্রভাবশালী। ফলে তাদেরকে উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেও কোন লাভ হয়নি।

এ ব্যাপারে কথা হয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা শ্রাবন্তী রানী দাসের সাথে। তিনি জানান, অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য বেশ কয়েকবার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার আবদুস সাত্তার এবং মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএন্ডএফপি) ডা: চন্দ্র শেখর কুন্ডু জানান, ইতিমধ্যে খেদাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর নির্মানের জন্য টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনকে বার বার অবহিত করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান জানান, বিষয়টি নিয়ে একাধীকবার উপজেলা এবং জেলা প্রশাসনের সভায় উত্থাপিত হয়েছে। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একই দাবি করেন পরিবার পরিকল্পনা যশোরের উপপরিচালক শবনম মমতাজ রোজি।